নবীর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত
দরূদ, দুরূদ বা দুরূদ শরীফ (ফার্সি: درود) হল একটি সম্ভাষণ যা আমাদের প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা:)-এর শান্তির প্রার্থণা উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়ে থাকে। এটি একটি ফার্সি শব্দ যা মুসলমানদের মুখে বহুল ব্যবহারের কারণে ১৭শ শতাব্দীতে বাংলা ভাষায় অঙ্গীভূত হয়ে যায়। বৃহত্তর অর্থে মুহাম্মদ (সা:)-এর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি এবং সহচরদের প্রতি আল্লাহ্র দয়া ও শান্তি বর্ষণের জন্য প্রার্থনা করাই দরূদ। দরূদকে প্রায়ই সম্মানসূচকভাবে ইসলামী পরিভাষায় “দরূদ শরীফ”ও বলা হয়ে থাকে।
মুহাম্মদ (সা:)-এর নাম উচ্চারণের সময় সর্বদা “সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” (অর্থ: আল্লাহ’র শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর উপর) বলা হয়, যা একটি দরূদ। একটি দুরূদের অর্থ এরকম: “হে আল্লাহ, মুহাম্মদ (সা:)-এর প্রতি আপনি দয়া পরবশ হোন। তাঁর আলোচনা ও নামকে আপনি এই পৃথিবীর সকল আলোচনা ও নামের মাঝে সর্বোচ্চ স্থানে রাখুন।”
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিশ্ব মানবতার জন্য আদর্শ শিক্ষক। সুতরাং বিশ্বনবীর আদর্শ জীবন অনুসরণ ও অনুকরণের পাশাপাশি তার প্রতি দরূদ পাঠ করা প্রত্যেক ঈমানদারের আবশ্যক কর্তব্য। যা তুলে ধরা হলো-
দরূদ পাঠের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। কেননা আল্লাহ তাআলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম (দরূদ) প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ: আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। (সূরা আল আহযাব, আয়াত: ৫৬)
অত্র আয়াতে আল্লাহ সালাত পাঠানোর মর্মার্থ হলো- রহমত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবীর প্রতি অবিরত রহমত বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের সালাত পাঠানোর মর্মার্থ হলো- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেন। এই দোয়াই হচ্ছে দরূদ। সুতরাং বিশ্বের ঈমানদাররা, তোমরাও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়।
দরূদ পাঠের গুরুত্ব:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামাতের দিন সেই ব্যক্তিই আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে যে আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করে। (তিরমিজি)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তির উপস্থিতিতে আমার নাম উচ্চারিত হবে, কিন্তু আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে না, সে বড় কৃপণ। (তিরমিজি)
দরূদ পাঠের ফজিলত:
দরূদ পাঠকারীদের সুসংবাদ প্রদানে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। তখন তার চেহারায় আনন্দের আভা দেখা যাচ্ছিল। এসেই বললেন, হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসেছিলেন এবং বলে গেলেন- হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আপনি কি এতে সন্তুষ্ট হবেন না যে, আপনার উম্মতের কেউ আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করলে আমি তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবো। কেউ একবার সালাম পেশ করলে তার প্রতি সালাম পেশ করবো ১০ বার। আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি দরুদ পাঠের তওফিক দিন। (নাসাঈ)
অপর বর্ণনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে। আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করেন, এবং তার দশটি গোনাহ (ছগিরা) মাফ করা হয়, ও তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। (নাসাঈ)
সুতরাং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ বাস্তবায়ন করি। পাশাপাশি তাঁর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ দরূদ পাঠ করে তার শাফায়াত লাভে স্বচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করার তাওফিক দান করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন